কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা সদরসহ ছোট বড় বিভিন্ন ষ্টেশনে বিস্ফোরক অধিদফতর ও পরিদর্শকের লাইসেন্স ছাড়াই বিভিন্ন বাজার ও রাস্তার পাশে যত্রতত্র মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারে অবৈধভাবে গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলার কয়েকটি স্থানে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে কয়েকজন আহত হয়েছে। আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে বেশ কটি বাড়ি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় ছোট-বড় ষ্টেশন ও বিভিন্ন বাজারে প্রায় তিন শতাধিক দোকানে বিভিন্ন কোম্পানির সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবসা চলছে।
শুধু তা-ই নয়, মুদি দোকান, চায়ের দোকান, গ্রামীন দোকান, হার্ডওয়ারের দোকান ও স্টেশনারি দোকানেও খোলামেলাভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে। দোকানের সামনে রাস্তা দখল করে রাখা হয়েছে এসব সিলিন্ডার।
ঝুঁকিপূর্ণ এসব সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রির জন্য বিস্ফোরক দ্রব্যের লাইসেন্স গ্রহণের পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখার বিধান থাকলেও ব্যবসায়ীরা এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না।
স্থানীয় বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ী ও সচেতন মহল জানান, অসাবধানতাবশত এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো একটিতে আগুন লাগলে সম্পূর্ণ বাজার ধ্বংস হয়ে যাবে।
জানা গেছে, এ উপজেলায় বাসাবাড়িতে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার। পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহকৃত গ্যাস না থাকার কারণে আশ্রয় নিচ্ছেন গ্যাস সিলিন্ডারের।
এর বাইরেও হোটেল-রেস্তোরাঁ, শিল্প, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সর্বোপরি প্রাইভেট কার, মাইক্রো, নোহা, সিএনজিসহ প্রায় সবরকম যানবাহনে অবাধে ব্যবহৃত হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। যেহেতু এটা ব্যয়সা,শ্রয়ী ও সহজলভ্য। তবে এর ঝুঁকির দিকটিও অবহেলা করা যায় না কোন অবস্থাতেই। এসব গ্যাস সিলিন্ডার চট্ট্রগ্রামের বেশ কটি গ্যাস পাম্পা থেকে এনে উপজেলাজুড়ে এখন যত্রতত্র সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, মেয়াদ উত্তীন্ন বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত হচ্ছে কয়েক হাজার গ্যাস সিলিন্ডার। সংশিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ গ্যাস সিলিন্ডারই মানসম্মত নয়। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিলিন্ডার ব্যবহৃত হয় ও হচ্ছে।
আমদানিকৃত সিলিন্ডারের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতকৃত সিলিন্ডারও রয়েছে। একটি সিলিন্ডারের মেয়াদ সাধারণত পাঁচ বছর।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই নিয়ম আদৌ মানা হয় না। নিম্নমানের সিলিন্ডারের কথা বাদ দিলেও ভাল মানেরগুলোও নিয়মিত দেখভাল তথা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। ১৫-১৬ বছরের পুরনো সিলিন্ডারও ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলো প্রায় ভয়ঙ্কর ‘বোমাতুল্য’ হয়ে উঠেছে। ফলে যে কোন সময় যে কোন স্থানে তা বিস্ফোরিত হয়ে প্রাণ ও সম্পদহানির কারণ হতে পারে।
এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। মুদি দোকান, মুরগির দোকান, এমনকি ফ্ল্যাক্সিলোডের দোকানেও মিলছে রান্নার গ্যাস। কোনো নিয়মনীতি না মেনেই চলছে এসব গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা।
প্রচন্ড বিস্ফোরণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই দাহ্য পদার্থের বোতল বাজারজাত করতে এখন লাগছে না বিস্ফোরক লাইসেন্স। যে যেভাবে পারছে সেভাবেই লাভের জন্য এ বিপজ্জনক দাহ্য পদার্থ বিক্রি করে চলছে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, এ কাজে বেসরকারি কয়েকটি কোম্পানির পরোক্ষ মদদ রয়েছে। এসব কোম্পানির বিক্রি বৃদ্ধির আশায় যেখানে সেখানেই সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে।
চকরিয়া পৌরসভার বেশ কজন ষ্টেশনারীর দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করা স্বর্থে দোকানের মালিক বলেন, এখানকার মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনা করে সিলিন্ডার রেখেছি। অনুমতি নিয়ে সিলিন্ডার বিক্রি করতে হয় এমন কথা আমি শুনিনি।
খুটাখালীতে এক গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতা বলেন, লাইসেন্স করতে গেলে বিভিন্ন কাগজপত্র নিয়ে জটিলতা তৈরি করেন কর্মকর্তারা। এটা নেই, সেটা নেই বলে হয়রানি করেন। এরপর নকশা তৈরির জন্য খরচ করতে হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। এসব কারণে বাধ্য হয়ে লাইসেন্স না করেই ব্যবসা করি।
এ ব্যাপাওে চকরিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনে ফোন করা হলে স্টেশন অফিসার জিএম মহিউদ্দিন কে পাওয়া যায়নি। তবে সাব অফিসার আবদুল মালেক জানায়, এ বিষয়ে সিনিয়র ষ্টেশন অফিসর ইদ্রিস আলীর সাথে কথা বলার জন্য বলেন। তবে তিনি চকরিয়া স্টেশন অফিসার ও সিনিয়র স্টেশন অফিসার ইদ্রিস আলীর মোবাইল নাম্বার দিতে অপারাগতা প্রকাশ করেন। তবে তিনি জানান ইদ্রিস আলী সাতকানিয়া থেকে চকরিয়ায় দায়িত্ব পালন করেন।
চকরিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের না প্রকাশ করার শর্তে এক ফায়ার ফাইটার জানান, স্টেশন অফিসারের অনুমোদনবিহীন প্রতিষ্ঠানে যত্রতত্র সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করতে পারে না। ফায়ার সার্ভিসের ওয়ার হাউজ বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে বিক্রি করতে হয়। কিছু প্রাইভেট কোম্পানী কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে মেয়াদোত্তীণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী সিলিন্ডার বাজারজাত করছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহেদুল ইসলাম জানান, অনুমতি ছাড়া গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি সম্পন্ন অবৈধ। যারা অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসার সাথে জড়িত খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পাঠকের মতামত: